চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৫ উপায়:-

আমরা অনেকেই জানি না চুল কেনো পড়ে, এর সমাধান করতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে চুল পড়ার কারণ গুলো।যে সব কারণে আমদের চুল পড়ে যায়-


Topic:-

1. চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়।

2. চুল পড়া বন্ধ করার তেল।

3. চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।

4. চুল লম্বা করার টিপস।

5. চুলের জন্য উপকারি তেল।

6. চুলের জন্য উপকারী কিছু খাবার তালিকা।

7. ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়।

9.চুল পড়া বন্ধ করার সবচেয়ে সহজ উপায়।

চুল পড়ার কারণ-

১.অপুষ্টি:

চুল পড়ার প্রধান কারণ হলো পুষ্টির অভাব।আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন পুষ্টির দরকার তেমন চুলের ও পুষ্টির প্রোয়োজন।সাধারণত বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর অভাব হলে আমাদের চুলের পুষ্টি কমে যায়।যেমন:জিংক,কপার,আইরন,প্রটিন,ভিটামিন ডি এগুলা হচ্ছে চুলের প্রধান মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট।এইগুলো কোনোভাবে কমে গেলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যেতে পারে।এছাড়াও ছোটবেলা থেকে যদি খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ না থাকে তাহলেও চুল পড়ে যায়।

২.হরমোনের তারতম্য:

সাধারণত এটা মহিলা দের ক্ষেত্রে বেশি প্রজয্য। মহিলাদের প্রেগন্যান্সি,মনোপোজ,ল্যাকটশন এই তিনটি প্রধান সময়ে মেয়েদের একটু হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে আমাদের চুলের উপর প্রভাব পড়ে,এবং এতে আমাদের চুল পড়ার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।


৩.প্রয়োজনের থেকে বেশি ক্যামিক্যাল ব্যবহার:

চুলে অত্যাধিক পরিমাণে ক্যামিক্যাল,কালারিং এজেন্ট অথবা চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এমন যেকোনো ধরণের প্রডাক্ট ব্যবহার করলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যেতে পারে।

৪.গরম পানি:

গোসলের সময় যদি কুসুম গরম পানি মাথায় পড়ে সেক্ষেত্রে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যেতে পারে।

এছাড়াও ভেজা চুল আচরালে,খুব বেশি শক্ত হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে বা বেশি পরিমাণে হেয়ার ড্রায়ার,হেয়ার স্ট্রেইটনার ইউজ করলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

তাই আমাদের এই বিষয় গুলোতে অবশ্যই সাবধান হতে হবে।

চুল পড়ার সমাধান-

১.খাদ্য ও পুষ্টি :

বেশি বেশি পানি খেতে হবে।খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ এর পাশাপাশি শাক-সবজি ও থাকতে হবে।গরুর মাংস চুলের জন্য উপকারি।

চুলের জন্য উপকারি কিছু খাবারের তালিকা:

(i)ডিম- সুন্দর চুলের জন্য ডিম আপনার খুব ভালো বন্ধু।আমাদের চুল শর্করা বা ফ্যাটের তৈরি না।চুল প্রায় পুরোটাই প্রটিনের তৈরি।আর আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিত জানি যে খাবারে প্রটিনের অভাব হলে চুল পড়ে যায়,কিন্তু আমাদের অনেকের খাবারেই যথেষ্ট পরিমাণ প্রটিন থাকেনা।কারণ আমরা সাধারণত সবসময় ভাতটাই বেশি খাই।তাই সুন্দর চুলের জন্য খাবারের তালিকায় ১-২ টা ডিম রাখবেন।ডিমে আছে-বায়োটিন,সেলেনিয়াম,ভিটামিন -১২ ইত্যাদি।

এইগুলো চুল ঘন,কালো,সুন্দর রাখতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

(ii)বাদাম- চীনাবাদাম,কাঠবাদাম,ওয়ালনাট,কাজুবাদাম এগুলোতে আছে সাস্থ্যকর ফ্যাট।বিশেষ করে ওমেগা-৬ ফ্যাট।যা চুল সতেজ রাখতে আর চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।এই ওমেগা-৬ ফ্যাট আমাদের শরীর থেকে তৈরি হয়না,খাবার থেকে নিতে হয়।তাই প্রতিদিনের নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন।তবে এগুলা বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে তাই সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

(iii)তৈলাক্ত মাছ- যেমন-ইলিশ,কই মাছ,চাপিলা,মলা এইগুলোতে ওমেগা-৩ ফ্যাট আছে।এইগুলো চুল ঘন কালো করতে সাহায্য করে এবং চুলের প্রটিন এরও উৎস।

(iv)সবজি এবং ফলমূল- যেমন-মিষ্টি আলু,পেঁপে,গাজর,মিষ্টি কুমড়া,আম এগুলা ভিটামিন এ' তে ভরপুর।চুলের ফলিকল, অর্থাৎ চুলের গোড়া যেখানে থেকে চুলটা বড় হয় সেইটা ঠিকমতো কাজ করার জন্য ভিটামিন এ' দরকার।আর সেটার উৎস হলো কমলা রঙের ফল ও শাক-সবজি।একদিনে যতখানি ভিটামিন দরকার আধা কাপ গাজরে তার অর্ধেক পুরণ হয়ে যায়।তাই দিনে কিছু হলুদ ফল ও শাক-সবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

(v)পালং শাক- চুলের যত্নে পালং শাক একটি চমৎকার খাবার।এতে ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন এ',ভিটামিন সি', আয়রন,ফলেট।এই সবগুলোই ঘন কালো চুলের জন্য প্রোয়োজন।

(vi)টক ফল- যেমন- কমলা,লেবু,মালটা,কিউয়ি ফল এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শরীর নিজে থেকে ভিটামিন সি বানাতে পারেনা তবে টক জাতীয় ফল খেলে সেখান থেকে ভিটামিন সি' নিয়ে  নিতে পারে।

(vii)বিভিন্ন ধরনের বীজ- যেমন-চিয়া সিডস,মিষ্টি কুমড়ার বিচি,তিসির বীজ,সূর্যমুখির বিচি ইত্যাদি। এগুলাতে সুন্দর চুলের জন্য অনেক রকম উপাদান আছে।যেমিন-চিয়া সিডস এ আছে প্রচুর পরিমাণে আলফা- লিনোলিনিক এসিড,সূর্যমুখির বিচিতে আছে বায়োটিন,মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছ জিংক।গবেষণায় জানা যায় এইগুলোর অভাবের সাথে চুল পড়ার সম্পর্ক আছে।তাই এইগুলো বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

চুলের জন্য উপকারি তেল-

অয়েল ম্যাসাজ খুব উপকারী, আমাদের মাথার পাতলা চুল মোটা বা ঘন করার জন্য।অয়েল ম্যাসাজের ফলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়।নিয়মিত ম্যাসাজ করলে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাবে।


১. আদার তেল-

আদার তেল বাজারেও কিনতে পাওয়া যায়।আদার তেল কিন্তু চুল ঘন করার জন্য খুব উপকারী।আমাদের চুল গোড়া থেকে পাতলা হয়ে গেলে সমানে পড়তে শুরু করে।আদার তেল চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।আদার তেল চাইলে খুব সহজে বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন।

২. জবা ফুলের তেল-

এই ফুলের তেল মাথায় লাগালে চুল পড়া চিরতরে বন্ধ হবে,এবং খুব তাড়াতাড়ি নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।ঘন কালো একগুচ্ছ চুলের জন্য জবা ফুলের তেল খুবই উপকারী।


৩. অ্যালোভেরা তেল-

অ্যালোভেরা আমাদের চুল গজানোর সাথে সাথে চুল মজবুত ও ঘন করে।তাই অ্যালোভেরা তেল আপনার মাথার চুল যদি পাতলা হয়ে গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বেশ উপকারী হবে।ঘৃতকুমারীর জল চুলের জন্য ভালো।

৪. আমলকী তেল-

চুলের ক্ষেত্রে আমলকীর উপকারিতা নতুন করে আর বলার কিছু নেই। তাই পাতলা চুলের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে এই তেল অবশ্যই ব্যবহার করুন।


৫.পেঁয়াজের তেল-

পেঁয়াজের রস আমাদের চুল গজানোর ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মত কাজ করে।খুব কম সময়েই তাই এই তেল আপনার চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। তাই পেঁয়াজ এবার থেকে শুধু রান্নার কাজে না লাগিয়ে চুলের খাদ্য হিসেবেও কাজে লাগাতে পারেন।

কন্ডিশনার ও চুল শুকানো -

(i) অনেকে শ্যাম্পু ব্যাবহারের পরে কন্ডিশনার ব্যাবহার করেন না।
এইটা চুলের জন্য ক্ষতিকর।আমাদের চুল ভালো থাকার জন্য কিছু তেল দরকার,যা মাথার তালু থেকেই আসে।আমরা শ্যাম্পু ব্যাবহার করে যখন চুল ধুই তখন তার সাথে তেল টাও ধুয়ে যায়।কন্ডিশনার আমাদের মাথার তেল আবার চুলে ফেরত দেয়।তাই প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যাবহার করতে হবে।

(ii) ভেজা চুল আঁচরাবেন না।এতে চুল নষ্ট হয়ে যায়।চুল শুকানোর পরে চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচরাবেন।

(iii) ভেজা চুল ঘষে ঘষে মুছা যাবে না।ভেজা চুল ঘষে ঘষে মুছলে চুল নষ্ট হয়ে যায়।তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে পানি বের করতে হবে।

(iv) হেয়ার ড্রায়ার ও কার্লিং আয়রন দিয়ে চুল শুকাবেন না।চুল বাতাসে শুকিয়ে নেয়া ভালো, তবে যদি ব্যাবহার করতেই হয় খুব কম হিটে ব্যাবহার করবেন এবং সপ্তাহে একদিন এর বেশি ব্যাবহার না করার চেষ্টা করবেন।

(v) খুব টাইট করে চুল বাঁধবেন না। যদি আপনার খাবার ঠিক থাকে,আর চুলের যত্নও নিচ্ছেন তারপরেও চুল পরে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

চুল দ্রুত লম্বা করার কিছু টিপস:

চুল দ্রুত লম্বা করার জন্য বাজারে বিভিন্ন শ্যাম্পু,তেল পাওয়া যায়।কিন্তু বাজারের এসব প্রসাধনি তে বিভিন্ন ক্যামিক্যাল ব্যাবহার করায় এর বিভিন্ন সাইডইফেক্ট থাকে।এতে চুলের ক্ষতি হওয়ায় ও ভয় থাকে।কিন্তু ঘরোয়া ভাবে প্রাকৃতিক জিনিস নিলে চুলের কোনো ক্ষতি হবেনা।

**জেনে নিন প্রাকৃতিক ভাবে চুল লম্বা করার কিছু ঘরোয়া উপায়:

১.চায়ের পাতা চুলের প্রাকৃৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে অনেক কার্যকরী, চা পাতা ২ কাপ গরম পানিতে ফুটিয়ে, পাতাগুলো ছেঁকে পানি ঠান্ডা করে লেবুর রস দিয়ে চুল ধুয়ে নিন, ভালো ফল পাবেন।

২. অলিভ অয়েল,কোকোনাট অয়েল একসাথে মিশিয়ে ভালো করে মাসাজ করে চুলে লাগিয়ে রাখুন।সাথে ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন।সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।

৩.পেঁয়াজের রস চুল লম্বা করতে ও নতুন চুল গজাতে বেশ কার্যকরী।চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী পেঁয়াজ পেস্ট করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন।

৪. একটি ডিম ভালো করে ফেটে লেবুর রস ও অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ৪০ মিনিট, এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

মন্তব্যঃ

এই আর্টিকেলে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে কিছু টিপস শেয়ার করেছে। আপনার কাছে যদি এই টিপসটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন। এরকম আরো ইন্টারেস্টিং তথ্য জানতে আমাদের পাশে থাকুন। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন www.rupokit.com । আমাদের এই পোস্টের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন। যেন আপনার মন্তব্যটির ফলে আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি।